ঢাকা থেকে পারকির চর
পারকির চর ভ্রমণ গাইড
চট্টগ্রাম সৈকত
পারকির চর কিভাবে যাবেন
পারকির চর সমুদ্র সৈকত
ভূমিকা: ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতা থেকে সাগরবেলার টানে ঢাকার ব্যস্ত জীবন, কোলাহল ও ট্রাফিক জ্যামের মাঝে হঠাৎ যদি মনে হয় কিছু সময় প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে হবে, তাহলে পারকির চর হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য। চট্টগ্রামের দক্ষিণে অবস্থিত এই মনোরম সমুদ্র সৈকতটি দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে। সমুদ্র, সূর্যাস্ত, ঝিনুকভরা বালুচর আর জেলেদের মাছ ধরা—সব কিছু মিলিয়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে সেখানে।
পারকির চর কোথায়?
পারকির চর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম
জেলার আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত একটি ছোট উপকূলীয় এলাকা। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। সৈকতের একদিকে সমুদ্র, অন্যদিকে নদী—এমন এক দ্বৈত সৌন্দর্য
খুব কম জায়গাতেই দেখা
যায়।
ঢাকা থেকে পারকির চর কিভাবে যাবেন?
Step-by-Step ভ্রমণ গাইড:
1. প্রথম ধাপ: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেকোনো বাস, ট্রেন বা বিমানে পৌঁছাতে
হবে। বাসে যেতে সময় লাগে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা,
ট্রেনে ৬-৭ ঘণ্টা
এবং বিমানে মাত্র ১ ঘণ্টা।
2. দ্বিতীয় ধাপ: চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছে আপনাকে আনোয়ারা উপজেলার দিকে রওনা দিতে হবে। আপনি চান্দগাঁও, পাঠানটুলী বা বহদ্দারহাট থেকে
সিএনজি/মাইক্রোবাস বা লোকাল বাস
ভাড়া করে যেতে পারেন।
3. তৃতীয়
ধাপ: আনোয়ারা থেকে ৩০-৪৫ মিনিটের
মধ্যে আপনি পৌঁছে যাবেন পারকির চরের সমুদ্র সৈকতে।
কেন যাবেন পারকির চরে?
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
পারকির চরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে
তার নির্জন ও নির্মল প্রকৃতি।
এখানে কৃত্রিম কোনো সাজসজ্জা নেই, বরং কেবল প্রকৃতির স্পর্শে গড়ে ওঠা এক অনিন্দ্য সৈকত।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য
এখানে সত্যিই মনমুগ্ধকর।
মাছ ধরা ও নৌকা চলাচল:
সাগরের কিনারে বসে আপনি দেখতে পাবেন স্থানীয় জেলেরা নৌকা নিয়ে মাছ ধরছে। আপনি চাইলে নৌকায় করে কিছুটা গভীর পানিতে ঘুরেও আসতে পারেন।
ছবির মতো সুন্দর লোকেশন:
ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি একটি স্বর্গ। বালুচর, লাল সূর্য, ঝিনুক, নৌকা আর দিগন্তজোড়া জলরাশি—সব মিলে নিখুঁত
ইনস্টাগ্রাম ফ্রেম!
নীরবতা ও প্রশান্তি:
কক্সবাজার বা কুয়াকাটার তুলনায়
এখনো তুলনামূলক কম পর্যটক যান
পারকির চরে। তাই এটি একান্ত সময় কাটাতে চমৎকার একটি জায়গা।
কেন পারকির চর দিন দিন
জনপ্রিয় হচ্ছে?
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেকেই এই সৈকতের কথা
জানতে পারছে। দিন দিন বাড়ছে পর্যটকের আনাগোনা। যেহেতু এটি তুলনামূলকভাবে কম খরচে ভ্রমণের
সুযোগ করে দেয়, তাই তরুণ ও শিক্ষার্থী ভ্রমণকারীদের
জন্য এটি আদর্শ।
ভ্রমণ পরামর্শ ও টিপস:
• পানি
ও শুকনো খাবার সাথে রাখুন, কারণ সৈকতের আশেপাশে এখনো পর্যাপ্ত হোটেল বা দোকান নেই।
• সুর্যাস্তের আগে ফিরে আসার চেষ্টা করুন, কারণ সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলো
বা নিরাপত্তা নেই।
• সানস্ক্রিন, হ্যাট ও সানগ্লাস ব্যবহার
করুন, সূর্যের তাপ থেকে বাঁচার জন্য।
• পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্লাস্টিক বা খাবারের প্যাকেট
সৈকতে ফেলে না যাওয়াই শ্রেয়।
পারকির চর ঘুরে এসে
অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল চমৎকার। ঢাকার ধুলোময় শহর থেকে বের হয়ে যখন প্রথম ঢেউয়ের শব্দ কানে এল, মনে হচ্ছিল যেন প্রকৃতি নিজ হাতে লিখে দিয়েছে প্রশান্তির কবিতা। ঝিনুক কুড়ানো, বালুতে হেঁটে হেঁটে সূর্যাস্ত দেখা, আর নিরিবিলি পরিবেশ—সব মিলিয়ে মনে
হয়েছে, আবারও ফিরে আসব।
শেষ কথা:
পারকির চর এখনো অবারিত,
নিখুঁত ও প্রাকৃতিক এক
সৈকত। ঢাকার অদূরে এমন একটা জায়গা যেখানে একদিনেই ঘুরে এসে মনটাকে তরতাজা করে ফেলা যায়। আপনি যদি সাগরের কোল ঘেঁষে একদিনের ট্রিপ চান, তাহলে নিঃসন্দেহে পারকির চর হতে পারে
আপনার পরবর্তী ভ্রমণ তালিকার সেরা সংযোজন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন